Monday 15 June 2015

সর্বভূতেষু

এক
কিছুদিন আগে খবরের কাগজে পড়েছিলাম এক ভদ্রলোকের দুর্ঘটনামৃত্যু। তিনি দুপুরবেলা স্নানঘর থেকে ভিজে কাপড়ে বেরিয়েই দেখতে পান, ছেলে বিদ্যুত-তার আঁকড়ে ছটফট করছে। ওমনি, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য, তাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাঁচাতে।

এই মানুষটি কি শিক্ষিত ছিলেন না? জানতেন না ভিজে কাপড়ের অতিরিক্ত অশনিপরিবাহিতার কথা! আমার ধারণা, জানতেন। এমনকি তিনি বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী হলেও আমি অন্তত অবাক হব না। জ্ঞান এমন কিছু --- যা মানুষ অংশত ভেতরে নিয়ে জন্মায়, অংশত রোজগার করে। জ্ঞান যখন রক্তে বসে যায় তখন সে শৈলী। তখন তাকে অস্তিত্বের সঙ্গে ছেদহীন বলে বাইরের মানুষ এবং নিজেরও মনে হতে থাকে। ইলেকট্রিক্যাল এঞ্জিনিয়ারের তড়িৎ-বিষয়ে ধারণা বা কবির ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাকে এই শৈলী বলা যায়। কিন্তু এ-সমস্তের চেয়েও গভীর এক মূর্খ সত্তা আমাদের রক্তমাংসে বাসা করে আছে। বাঁচা আর বাঁচানোর সৎ সরল তাড়নাই হল প্রাণচেতনার সবচেয়ে মৈলিক বিষয়। তাই শৈলী বরবাদ করা নগ্ন চেতনা বেরিয়ে এসেছে সংকট সময়ে।

সবচেয়ে মহৎ বিপদের সামনে মানুষ তো শস্ত্রহীন হয়েই দাঁড়াবে। ধরা যাক, এন্তেকাল। যতই ওষুধ আর নার্সিংহোম আর মেডিক্লেম-এ সাজে থাকি না, মহাযমের সঙ্গে লড়াইতে তার মুখব্যাঁকানো প্রশ্ন, খালি হাথ? এবং আমাদের রিপ্লাইঃ হ্যাঁ, মৃত্যুগহ্বর সিং!

এমনি করে যখন সিঙ্গুর ঘটল, নন্দীগ্রাম ঘটল, তক্ষুনি যে শিল্পীরা কবিরা আঁকলেন লিখলেন বা গাইলেন গায়কজন, তারা সেসব করলেন স্টাইলহীন নগ্ন সংবিৎ থেকেই। নিজের রাজ্যের মানুষকে হত্যাপীড়িত, ধর্ষণঅপমানিত দেখে ওই ভিজে কাপড়ের লোকটার মতোই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাদের। তার মানে বহুদিনের চর্চায় তৈরি নিজের শিল্পভাষার তোয়াক্কা না করে অন্ত্যমিলে হত্যা আর ছন্দে ধর্ষণ লিখলেন না। সোজাসুজি কথা বলে দিলেন কত কত কবিজনতা। (বিবেচনারহিত বাপটির মতো তাদেরও জিভ খড়খড়ে হয়ে যেতে পারতো মৃত্যুআস্বাদে)।  

এখন মুশকিল, ভঙ্গিপরিত্যাগী কবিদেরও অনেক পাঠকের বকুনি খেতে হয়। তারা লেখাগুলোকে ক্লাসরুমের বাইরে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেন। “আজ রাতে শেষ হয়ে গেল শীত” যেমন জীবনানন্দ লিখেছিলেন, “এই কবিতার বই থেকে প্রতিভা হারালেন কবি”-জাতীয় ঘোষণায় শোকনম্র ঢেউ দিয়ে যায় বাতাস। কেননা, স্টাইল-নুন ছাড়া তো কাব্যতরকারি মুখে তোলার জো নেই!

গোটা কড়াইটাই যে লবনাক্ত, সেকথা প্লিজ তাদের মনে করিয়ে দেবেন কেউ?

তাহলে যেখানে সামাজিক অত্যাচার, দুটো অপশান রইল শিল্পীদের জন্যে। হয় তারা প্রভাবিত না হয়ে অন্য বিষয় বাছবেন লিখতে চেয়ে, অথবা দমনের ঘটনায় দুলে উঠবেন ---মাপমতো। বেড়া ডিঙোবেন না, ডিরেক্ট রাইটিংয়ে যাবেন না।

ঠিক-বেঠিক, ভালো-মন্দের যে সংজ্ঞা তৈরি সমাজে, মনীষা বা বিচারের যে মাপদণ্ড প্রতিষ্ঠা পেল নানা শক্তিবর্গের চেষ্টায়, তারা এমনই শেখায়। বলে, প্রত্যক্ষ হয়ো না; তোমার কাজ নয় ঘুষভিখিরি বাবু বা বাসের চাকায় থ্যাঁতলানো স্কুলছাত্রী বা স্টেশন-সাবওয়ের ঘিনঘিনে অন্ধকারে পাগল নিয়ে পাগল হওয়া।  তুমি অনন্তস্থায়ীর কথা ভাবো, শাশ্বতের ছবি দাও। ততক্ষণে শ্বাস শতবার বন্ধ হয়ে যাক মানুষের, ভ্রূক্ষেপ করতে নেই। অর্থাৎ যে বাস্তব আমি ঘটাবো দিনদিন, তার ফ্রেম থেকে তোমার কন্ঠস্বরটি সরিয়ে দিলাম। একদল খ্যাপাটে, ভ্রসাযোগ্য-কদাপি-নয় শিল্পীকে নিয়ন্ত্রণ খুব মুশকিল কাজ। কাজেই তার ক্রিয়াকর্ম যত অস্পষ্ট, দুর্বোধ্য আর সমাজের কম মানুষের কাছে প্রেরণার মতো হয়, তত বাঁচা গেল!

সাহিত্যের আরও চরিত্র এই যে সে সংরক্ষিত হয়, ফলে ইতিহাসের উপাদান হয়ে যেতে ভালোবাসে। উল্টোদিকে খবরের কাগজের প্রায় কোনও সংরক্ষণমূল্য নেই। সাহিত্যের ছড়িয়ে পড়ার ধরণ এমনটাই --- পাঠক উদাসীন না হয়ে গেলে তার আনঅ্যাভেইলেবল হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে না। সাহিত্য প্রত্যাবর্তনমুখর। তাই দেশে দেশে অ্যাতো অ্যাতো লেখা দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ রেখেও কোনও অন্তিম লাভ তোলা যায়নি। তাছাড়া যে সাহিত্য আসন্নকালে অমরতা পায় না সেও ইতিহাস হিসেবে উঠে এসে, যদি পাঠক পুরাণ-অপ্রেমিক, তবু তাকে পুরানো কালপ্রবাহের মাথায় ছুঁড়ে দেয়। শাসকের এই দ্বিতীয় ভয় লিটারেচার নিয়ে।

কবিতা সৌন্দর্য উৎপাদন করে --- মতটা বেশ মহাশক্তির। কান্তির উল্টোদিকে কুৎসিতের ধারণা রয়েছে। তাই কুচ্ছিত যখন সাম্রাজ্যবিস্তারে এগিয়ে গিয়ে সৌন্দর্যের জায়গাগুলোতে কালি ছিটিয়ে নতুন নতুন ফুলবাগানের দখল নিয়ে ফেরে, তার প্রতিক্রিয়ায় সুষমাকেও পথে নামতে হবে, পালটা আক্রমণে বিশ্রীর জায়গির বেহাত করে সেখানে দরকার হয়ে পড়বে স্বর্গের শিলমোহর লাগিয়ে দেওয়া। অথবা, যেগুলো নিউট্রাল জোন, সেখানে পতাকা বসানো এই সূত্রে। তখন, এটা বারবারই হয়েছে যে, কবিমন হয়তো ভাষণের বা বিবৃতির বা রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রটাকে আত্মসাৎ করে কবিতার বীজ বুনে দেয়। এইভাবে বিশ্রী যত ভয়ংকর হিসেবে দেখা দেবে, সৌন্দর্য, সমানুপাতের মুখ চেয়েই, তত বড় মেলে দেবে শিল্পডানা।

লেখার ওপর হেঁটে হেঁটে প্রথম স্টপেজে পৌঁছোলাম, অথচ বিজলিগল্পের শেষ লাইন বলা বাকি। খবরের কাগজে পড়া সেই খবরে ভদ্রলোক মারা গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু যাকে রক্ষা করতে তার প্রাণ অতিক্রম করা চেষ্টা, সেই সন্তান বেঁচে যায়।

খারাপ কি!

দুই
বরং একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে এটা ভাবলে যে ওপরের ঘটনার তিনটে চরিত্রই --- বিদ্যুত, ছেলেটা আর তার বাবা --- তাদের চেষ্টায়, লক্ষ্যপূরণে সফল। তবে আমাদের মধ্যে পরাধুনিক ভাবুক আছেন যারা, তাদের বিরক্ত হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেই দুটো সংলগ্ন কিন্তু উলটো ভাবনার দ্বন্দ্বের মধ্যে ঢুকব এবার, লজিক বা দর্শনের বাঁধা বুলিতে যার নাম ডাইকোটমি। আর দেখতেও পাবো যে শ্বেতকৃষ্ণের মাঝের ধূষর ছায়াগুলোকে পাত্তা-না-দেওয়া না করলে এই “কনট্রাস্টিং অপোজিটস”-এর জন্ম-উপাদান খুঁজে নেওয়ার কাজটা সমাজে ক্রমশঃ বেড়ে চলা চিন্তার মেরুভিন্নতা সামলাতে দারুণ সাহায্য করবে।

শুরু করা যাক। অমরতা দুরকম --- একটা স্থানীয়, একটা সর্বজনীন। এটা বর্তমানের, ওটা ভবিষ্যতের দিকে তাক করা। সমসাময়িক অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই, তাৎক্ষণিক যন্ত্রণার পালটা প্রতিবাদ আমাকে এখন-সময়ের অমরতার দরজায় এনে দাঁড় করায়, যেখানে আগামী অবিনশ্বরের মুখোমুখি হতে গেলে বেশি বেশি অস্ত্রনির্ভর হতে হবে, ভঙ্গিনির্ভর। স্টাইল একরকম উপভোগ। তবে, বিপদকালে কেই বা কামনাপরায়ণ!

বাংলা কবিতায় সর্বজনীন অমরতার সবচেয়ে বড় সুবেদার যদি হন রবীন্দ্রনাথ, স্থানীয় অমরতা আজও সবচেয়ে বেশি যে কবির উমেদার তার নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য।

তাহলে অমরতার দুইভাগ কি অনেকটা লেখার স্টাইলের ওপর দাঁড়িয়ে? আপৎকালীন লেখা যেন মকবুল ফদা হুসেনের বড় বড় তাড়াহুড়ো ব্রাশের টান, যেখানে স্থির সময়ের সাহিত্য হল গনেশ পাইন --- ক্যানভাসের ফাঁকা জমিকেও কনে সাজানোর যত্ন নিয়ে তেলরঙের কুচি কুচি অলংকারে ঢেকে দিলেন।

না, আসল তফাতটা ভাবের ঘরে। সংকটসময়ের যে লেখা, সে প্রতিক্রিয়ালিপি। আর যে লেখার মস্তিষ্কের ভেতরে শুধু সাড়া দেওয়ার অনুভবটুকু আছে, সে সর্বজনের অমরত্ব পায়।
জর্জ ইভানোভিচ গুর্জেফ (Gurdjieff)-এর জন্ম আঠারশো ছেষট্টি, মৃত্যু ঊনিশশো ঊনপঞ্চাশ। রাশিয়ান আর্মেনিয়ায় জন্ম নেওয়া এই দার্শনিককে  পাশ্চাত্যে নন-ট্রাডিশনাল অধ্যাত্মিকতার প্রতিষ্ঠাতা বলা চলে। গুর্জেফের মতে সাধুরা আবেগপ্রবণ, ফকির শরীরব্যস্ত, যোগীরা ইন্টেলেকচুয়াল আর তিনি চতুর্থপথের সন্ধানী। চতুর্থপথই এক সহজসাধ্য বহুমাত্রিক উপায় আত্ম-উপলব্ধিতে পৌঁছোনোর। গুর্জেফ নিজেকে-অতিক্রম-করা ধ্যান-আন্দোলনের জন্ম দেন।

এই ভীষণ বিতর্কিত আবার প্রচুর প্রভাবশালী লোকটির দর্শনচিন্তা নিয়ে এখানে কোনও কথা নয়। শুধু বলি যে, তার বাবার একটা উপদেশকে খুব মূল্য দিতেন চতুর্থপথিক। তিনি গুর্জেফকে বলেছিলেন, বেটা, জীবনে তোমাকে আমি কিচ্ছু দিতে পারিনি, আমার এমন কোনও জ্ঞান বা সম্পত্তি নেই যা অন্যের উপকারে লাগবে। শুধু এই পরামর্শ মনে রাখার চেষ্টা ক’রো। যখন বিরুদ্ধ পরিস্থিতির সামনে পড়বে, এমন পরিবেশ যেখানে কেউ তোমাকে আক্রমণ করছে মনে বা শরীরে, তখন ভেতর থেকে যে স্বতঃস্ফূর্ত জবাব উঠে আসে, তাকে থামিয়ে দাও। সরে যাও ঘটনাক্ষেত্র থেকে। এবার ভাবো ঠান্ডা হয়ে, লোকটার আমাকে আঘাত করার সত্যিই কি কারণ আছে কোনও? যদি খুঁজে পাও, স্বীকার করো তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, ক্ষমা চেয়ে নাও। আর যদি দেখো তুমি কিছুতেই অভিযুক্ত হতে পারো না, গিয়ে বলো আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হয়েছে।

আক্রান্ত হয়ে পালটা আক্রমণ, একে বলা হচ্ছে প্রতিক্রিয়া, আর অন্যপক্ষের ভাবনাকে শান্ত বিবেচনার মধ্যে নিয়ে বিচারান্তিক যে মতামত,সে হল সাড়া দেওয়া। গায়ে মশা বসলে প্রতিক্রিয়ার হাত চড় কষায়, সেই হাতই হাতপাখা হয়ে মশাটা তাড়িয়ে দিলে সাড়া হয়ে উঠবে। প্রতিক্রিয়ার লেখা কারও হয়ে কথা বলে, কারও বিরুদ্ধে কথা বলে। সাড়া সবার দিকে বুঝতে পারার হাসিমুখ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ-পর্যন্ত পড়ে কেউ যদি ভাবেন প্রতিক্রিয়া সাড়ার চেয়ে কিছু কমজোরি, অপ্রশংসার ব্যাপার, তবে আমি তার প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দেব এই বলে যে প্রথমটার মধ্যে সততা ও সাহস বিদ্যমান। তারপর, তাকে দেখতে লাগে আক্রমণ, কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর তাগিদেই সে কাজ করছে। ভ্রাতৃত্ববোধের মানুষ অন্যের ধ্বংসের মধ্যে নিজের বিনাশকেই চিহ্নিত করে সচেতন হয়, প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তাহলে সবচেয়ে বড় কথা এটাই --- প্রতিক্রিয়া প্রাণ বাঁচায়। সাড়া বাঁচায় সভ্যতাকে।

সভ্যতা বলতে বুঝি সামগ্রিকতা, নানা বিরোধীশক্তির মধ্যে যোগ-বিয়োগের পর বেরিয়ে আসা রেজাল্ট্যান্ট ফোর্সের মতো। কিন্তু প্রাণ কীভাবে বাঁচে তার ওপর নির্ভরশীল সভ্যতা কী গড়ে উঠবে। দিনমাসবছর প্রতিক্রিয়ার হলে শতাব্দীসহস্রাব্দ সভ্যতার। প্রতিক্রিয়া রুখো কথা ফটাশ করে মুখের ওপর; সাড়া বলছে, রোসো, অন্যেরও একটা মন আছে তো, নাকি নেই! সাধারণ সময়ে দুজন দুটো আলাদা পানসি, কিন্তু বিশেষ ইতিহাসমুহূর্তে দু’নৌকো পাশাপাশি, এমনকই মিশে গিয়ে সেইম বোট ব্রাদার। কেননা, সভ্যতার একক তো প্রাণ, আমি জীবিত প্রাণের কথা বলছি। প্রাণের নির্মম চলে যাওয়া মতলব সভ্যতার সমূহ ভেঙে পড়া। কে জীবিত কীভাবে বুঝব? যে কোনও না কোনওভাবে প্রতিবাদ করে।

যখন প্রতিক্রিয়া তীব্র সৎ, তখন তার পেছনের মানুষেরা মুছে গিয়ে প্রতিক্রিয়াটাই একমাত্র জ্বলজ্বল করতে থাকে। তখন সেই সত্য-প্রতিক্রিয়া সাড়ার কাছাকাছি।  তখন প্রতিক্রিয়ার পেছনে ব্যক্তির ভূমিকা বুক বাজিয়ে বলার কথা নয়। প্রতিপক্ষেও ব্যক্তিসত্তা বড় হয়ে  দাঁড়াচ্ছে না।

সাধারণত মনের ওপরিতল প্রতিক্রিয়া দেখায়, ভেতরতল থেকে সাড়া উঠে আসে। অনেক কবির এই ভেতরের স্তরটা খুব কম আছে, তারা অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন, অনুভব না-থেকে। এদের সব কবিতার প্রেমের, কি যুদ্ধের, কি দুর্ভিক্ষের প্রতিক্রিয়া। লেখার মধ্যে তাৎক্ষণিকতার দানা যেন বড্ড গাদাগাদি করে বসে থাকল। অন্য একরকম কবির চেতনায় সামাজিক বা রাজনৈতিক ঘটনার রেশ তত বেশি করে পড়ে না। বোধতলটাই রয়েছে, প্রতিক্রিয়াদেশ অনুন্নত। আবার কারও মনের দুটো স্তর বিচ্ছিন্ন না উপর-নিচে নয়, প্রতিক্রিয়াস্তর ডুবে থাকছে ভেতরচেতনার ভেতরকণিকায়।
রবি ঠাকুর!

সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলাভাষার একজন প্রধান কবি এবং সেই বয়েসের রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে দিলে, বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি-সম্ভাবনা। এখন, সুকান্তের কবিতা পড়তে বসলে দেখা যাবে, তার বেশিরভাগেই সামাজিক অসাম্য আর শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। তার মানে, যাদের কারসাজির জন্যে এই লেখাসকল উৎপন্ন হল, তারা শত্রু, দমনযোগ্য, তাদের কোনও গুণই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সুকান্তের কাব্যগ্রন্থ “ছাড়পত্রে”র “বোধন” দীর্ঘকবিতা শুরু হবে এইভাবে:

হে মহামানব, একবার এসো ফিরে।
শুধু একবার চোখ মেলো এই গ্রামনগরের ভিড়ে।

রবীন্দ্রনাথ একটা গান গেয়েছেন, “ঐ মহামানব আসে” (স্বরবিতান ৫৬ খণ্ড)। এই রবীন্দ্রগীতির শেষ চার লাইনঃ

উদয়শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ
নবজীবনের আশ্বাসে।
জয় জয় জয় রে মানবভ্যুদয়
মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে।

আর, বোধনের অন্তিমে এসে সুকান্ত কি বললেন?

আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই
স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।

দেখুন, একজন কবি গোটা মানবজাতির জয় ঘোষণা করছেন, আরও সম্পন্ন আদর্শবোধে লোকসমাজ ভরে উঠুক আশা করছেন, আর একজন নতুন পরশুরাম --- প্রতিশোধচিন্তার পেট্রোল ছিটিয়ে দিয়ে তারই সমাজে বাস করা এক জনতাংশের ওপর --- হাতে তুলে নিয়েছেন অ-ক্ষমার “দেশলাইকাঠি”। আরও একটা আকর্ষণীয় খবর এখানে যে, সুকান্ত “বোধন” কবিতার “ছাড়পত্র”-অন্তর্গত প্রুফ দেখেছিলেন নিজের মৃত্যুবিছানায়, সাল ১৯৪৭, বয়েস একুশ। রবীন্দ্রনাথও “ঐ মহামানব আস” গানের জন্ম দেন জীবনের শেষ নববর্ষে, সাল ১৯৪১, বয়েস ঊনআশি। মৃত্যুর নিকটবর্তিতায় মিল থাকলেও দু’কবির ভাব আর ভঙ্গি যে আশমান-জমিন, তার কারণ আয়ুর আটান্ন মাইল ফারাক! দেখেশুনে মনে হয় প্রতিক্রিয়া সিদ্ধার্থ আর বোধিসত্ত্ব, দুজনেরই মুঠো-আয়ত্ব, কিন্তু সাড়া শুধু দ্বিতীয়জনের উপার্জন।

ইন ফ্যাক্ট, প্রতিক্রিয়াকে অনেকদিন মনের মধ্যে বসিয়ে রাখলে সে প্রতিশোধে বদলে যাবে। “বোধন”-এই গোল খেয়ে গোল করতে মরিয়া সুকান্তের (অস্ত্র ধরেছি এখন সমুখে শত্রু চাই/মহামারণের নিষ্ঠুর ব্রত নিয়েছি তাইঃ প্রস্তুতি/ছাড়পত্র) এক প্রসন্ন চেহারা আমরা পেয়েছি অন্য কিছু কবিতা, গানগুলো আর অবশ্যই “পূর্বাভাষ”-এর বিখ্যাত “প্রিয়তমাষু”-তে।

যাজক-মওলানা-বিশপের মতো যে কাব্যজীবন, একটাই প্রিয় বিশেষ ধর্মমত হাসিল করার স্বপ্নে সে চারপাশ দেখতে পায় না। ডানদিক-বাঁদিকের অন্য সব স্বপ্নছবি মুছে গিয়ে চোখের সামনে ফুটে ওঠে একটাই চোরাগলি। এই ”টানেল ভিশন”-এর জন্যে পরস্পরবিরোধী বর্ণসমাহার এবং সেসবের মধ্যে বিজড়িত আমার অবস্থান আমারই নজরে আসে না। “প্রিয়তমাষু”-র কবি যুদ্ধের আগুনকণা ওড়া বাতাসের মধ্যে হঠাৎ  চারপাশে তাকিয়ে দেখতে পেয়েছেন পুরো জীবনবৃত্তটাকে। ক্লান্তি এসেছে মনে, ক্রমাগত প্রতিক্রিয়া জানা ও পালটা জানানোর পরিস্থিতি যে অস্বাস্থ্যকর মূর্ছার জন্ম দেবেই।  “আগামী”, “তারুণ্য” --- এইরকম বেশকিছু কবিতার মতো সুকান্তের “প্রিয়তমাষু” কট্টর বিপ্লবপন্থীদের “শোধনবাদী” তকমা সহ্য করেও শেষ পর্যন্ত সাড়া জানানোর, ফলত, এক সাড়া জাগানো কবিতা।

হজরত মহম্মদের নামে একটা গল্প পড়েছিলাম। একদিন মহম্মদ প্রিয় শিষ্য আলিকে নিয়ে বেরিয়েছেন। হঠাৎ একটা লোক রাস্তার মাঝখানে আলিকে থাকিয়ে দিব্যু খারাপ খারাপ কথা বলতে শুরু করল। আলি প্রথমে শান্তভাবেই শুনছিলেন, তার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন হজরত। কিন্তু আস্তে আস্তে আলির রাগ বাড়তে লাগল, সংযমের কোটা শেষ করে এবার উলটে গালাগালি দেওয়া শুরু করেছেন লোকটাকে।  যেই শুরু, ঈশ্বরের দূত পত্রপাঠ হাঁটা লাগালেন। ঘেমে নেয়ে ওঠা ক্ষুব্ধ আলি একটু পরেই ছুটে এসে ধরবেন তাকে। কী ব্যাপার বলুন তো, পয়গম্বর! যতক্ষণ লোকটা আমাকে বিনা দোষে অশেষ কটু কথা শোনাচ্ছিল, দাঁড়িয়ে থাকলেন আমার পাশে, আর যেই আমি উচিত প্রতিবাদ করেছি, ওমনি ত্যাগ করে চলে এলেন? মহম্মদের নিভৃত জবাব, যতক্ষণ ব্যক্তিটি দুর্ব্যবহার করছিল, তুমি করনি, তোমার সঙ্গে আল্লাহ ছিলেন। তাই আমিও তোমার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। যখন তুমি পালটা অন্যায় শুরু করেছ, সেই মুহূর্তেই আল্লাহ পরিত্যাগ করলেন তোমায়। এখন আমি তোমার পাশে থাকি বা না থাকি, কী যায় আসে!

এই কাহিনি থেকে ঈশ্বরধারণা খুঁটে তুলে ফেললেও যে নীতিবোধ পড়ে থাকল তাকে সরতাজ বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।    

ধর্মীয় দর্শন তবু সাড়ার ভাবনাকে মূল্য দেয় নানারকম স্ববিরোধিতা গায়ে নিয়েও (হিন্দুধর্মে অহিংসার গীতিআলেখ্য আর যজ্ঞের ভূয়সী প্রাণীহত্যা পাশাপাশি চলে), কিন্তু রাজনৈতিক দর্শন (গান্ধীবাদের মতো করগোনা দু’একটা মত ছেড়ে দিলে) প্রতিক্রিয়ার নীতির ওপর বাবু হয়ে বসে আছে। এমনকি, এমন রাজনৈতিক তত্ত্বও কম হবে না যেখানে আপনি ক্রিয়া না করেও প্রতিক্রিয়ার টার্গেট হয়ে পড়লেন।

অ্যালোপ্যাথবিরোধী মানুষ পৃথিবীতে কিছু কম নয়। তারা বলেন, এতে রোগ নির্মূল হয় না, চাপা পড়ে থাকে সুবিধেমতো আবার ফোঁস করবে ব’লে। তখন পুরনো ওষুধে প্রায়ই কাজ হয় না, আবিষ্কার করতে লাগে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক। আর যারা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় বিশ্বাসী, তাদের কাছে ডাক্তার খোঁজ নেন বংশপরম্পরায় অসুখের ইতিহাস। তারপর একই রোগে নানা মানুষ পান বিভিন্ন ওষুধ। আস্তে সারে, কিন্তু মূলোচ্ছেদ করে সেরে যায়। এবার আপনি অসম্ভব কাশি কি দুরন্ত পেটব্যাথা নিয়ে হাজির হয়েছেন, হোমিওপ্যাথ বলবেন, এরিথ্রোমাইসিনের কোর্স করে আসুন বা অ্যামিক্লিন প্লাস খেয়ে নিন সাতদিনে একুশটা। তখন আশু প্রতিক্রিয়া দিয়ে ঠেকাতে হবে আক্রমণ। তারপর প্রথম চোটে ওরা হঠে গেলেই আমি সাড়া দেব, সাড়া দেওয়াই আমার দাওয়াই যে। আয়লা-দুর্গতদের আগে সরিয়ে আনুন উঁচু ডাঙ্গাজমিতে; খাবার, জল দিন। এটা ক্ষিপ্র কাজ। কিন্তু আসল কর্তব্য তো স্থায়ি শক্ত বাঁধ --- জলের নোনতা হাত থেকে বাঁচাতে। তাই যে মুহূর্তে প্রতিক্রিয়ার দরকার ফুরিয়েছে (হ্যাঁ, এই কথাটা প্রণিধান করো --- প্রতিক্রিয়ার এক আয়ুদশা আছে) সে সাড়ার ঘরে গিয়ে ব’সে পড়ে।  শিল্পকাজের বেলায় এটা হওয়া অতিরিক্ত বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া, সাধারণ মনোজগতের ব্যবহার এইরকম --- সেখানে রিঅ্যাকশান পদার্থবিদ্যার নিয়ম মেনে চলবে না। ক্রিয়ার সমান সে হয় না --- যে কোনও জৈব প্রতিক্রিয়া। বেশি বা কম হবে। বেশি হলে সে এমনকি বিপরীতও আর থাকবে না, চলে যাবে পালটা শোষণের জায়গায়। তাই দুটো শোষণ সব সময়েই পরস্পরের বন্ধু। বুদ্ধিজীবী মনকে এখানে দায়িত্ব নিতে হয় যে সামাজিক বা রাজনৈতিক ঘটনার প্রতিক্রিয়া থেকে মানবিক প্রয়োজন মিটিয়ে নিয়েই আমি তাকে ছেড়ে সাড়াকে ধরে নেব।

আর একটা অসুবিধেও খুব ধরার মতো। মূল ক্রিয়ার কাল পার ক’রে সময় তো হাঁটা লাগায় প্রতিক্রিয়া-পথে। প্রতিক্রিয়া, তার পালটা প্রতিক্রিয়া, তার পালটা...এভাবে চলতে চলতে শুরুর বিষয় যায় হারিয়ে, জনগন পুরো ইতিহাসকাল ধরে দুটো প্রতিক্রিয়া-যুদ্ধের মধ্যে বাস করতে থাকে।

এর পরেও কি আমরা দমনের সঙ্গে দমনের ভাষাতেই কথা বলব এবং এইভাবে বৈধতা ও শক্তি দেব তাকে? শাসকের আসল শ্ত্রু, মনে রাখতে হবে, রেসপন্ড করার মনোভাব। যার যজ্ঞশুদ্ধি থেকে বাদ যায় না কোনও পক্ষই, যার জবাব মুখের মতো হয়তো নয়, কিন্তু মনের মতো। প্রতিক্রিয়া অ্যান্টিভেনম, সাপে-কাটা রুগি নয়ত বাঁচে কীভাবে? কিন্তু কতটুকু বিষ দেব এই হিসেব, আসু্ন,‌ বিশ্লেষণ করি। একটা এক্সপায়ারি ডেটও আছে প্রতিক্রিয়ার, তার পরেও ব্যবহার করলে সে ভালো ভুলে গিয়ে তোমার সাড়ে সর্বনাশ করে দেবে।

প্রতিক্রিয়া প্রতিবাদ করুক, প্রতিরোধ করুক, কিন্তু অন্যায় শক্তি থেমে গেলে তাকে সাড়ার ঔদার্যে চলে যেতে দাও না! কেননা, প্রতিক্রিয়া মানুষের ত্রাণশিবির হলে সাড়াই তার স্থায়ি মোকাম। মুশকিল হল, অপারেশান একবার শুরু হয়ে গেলে নন্দীগ্রামের পালটা খেজুরি, খেজুরির বদলা মঙ্গলকোট...শুধু ঢেউ ওঠে, পড়তে চায় না। পড়ে যায় মানুষের দেহ --- কাঁচা সবুজ ধানখেতে,  খোড়ো-চালের ঘরের ভেতর কিম্বা নদীর চড়ায় মুখউপুড়।

কাজেই, কাজের হল সংলাপ বজায় রাখা বিরুদ্ধের সঙ্গে। নিজেকে একটা ইস্যুতে পরিণত করে বিরোধীকে তার পালটা ইস্যু হিসেবে না দেখে প্রত্যেককেই নানারকম বাস্তবতার সমাহার হিসেবে জানা। বোঝা যে, মানবিকতার যে চওড়া মাঝখানের পথ, যে কিনা সাড়া, তার পেছনে যে মনন তাতে হিংসা নেই, তার অহংবোধ সবচেয়ে কম।  সে প্রশান্ত, যেহেতু আত্মবিশ্বাসী (এই আত্ম-র মধ্যে গোটা পৃথিবী পড়ছে) এবং পূর্ণ ভালোবাসায়। প্রতিক্রিয়া থেকে অর্ধেক ঘৃণা আর উষ্মা সরে গিয়ে (কেননা, বাকি অর্ধেকে তো প্রেম ছিলই কষ্টজীবী মানুষের জন্যে) ভালোবাসা এসে গেলে সে সাড়ায় বদলে যাবে। এই ভালোবাসা অত্যাচারের পথে যাওয়া মানুষদের ওপর --- সহপ্রাণ হিসেবে, মানবসংসারের অন্য এক বাস্তবতা হিসেবে। মানুষ কীভাবে মানুষেরই বাধা ডিঙিয়ে যাবে? উপায় একটাই --- বাধাটাকে ভাই করে নাও। শত্রু-শত্রু খেলা ঠিক ছেলেমানুষি। তার হাত ছাড়িয়ে বড় হওয়ার চেষ্টা যে সমাজ যত দ্রুত পারল, বেঁচে গেল। সমাজে দ্বন্দ্ব একটা নিত্যজায়মান সত্যি কথা। কিন্তু বিভাজন তীক্ষ্ণ করলে বিভাগ মুছবে না। কাউকে তাড়ালে  উৎখাতও হয় না সে। শুধু বিরোধী এক বাড়ে সংখ্যায়।

সাড়া একধরণের আনফোল্ডিং, নিজের অস্তিত্বের হয়ত শুরু থেকেই পড়ে থাকে ভাঁজগুলো খুলে আরশোলা-টিকটিকির স্তূপে আলো পড়তে দেওয়া। অন্যের সুখের দামে নিজের আরাম অর্জনের স্বভাব যে-মানুষের প্রিয় হয়েছে, মিথ্যে দিয়ে সমস্যা সামলানোর চেষ্টা যে-মানুষের কাছে মসৃন, অহংকারকে চিল-উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার যে-মানুষের প্রতিজ্ঞা হয়েছে আর এইভাবে সরে গেছে তার মর্মকথা থেকে, অন্যের দেওয়া সাড়া তাকে বাধ্য করে দয়া হতে, অনুভব হতে, দড়াম করে তার শিরস্ত্রাণ খুলে মেঝের ওপর পড়ে যায়।

তাহলে সিনপসিস করি --- কাউকে আমার চেয়ে মন-অনুন্নত না ভাববো, তারপর তার উন্নতির জন্যে মৎলিখিত পথটাই ঠিক না ভাববো যেন। কাউকে বাতিল না করে দিই আমার কথা থেকে, আমার ভালো-বন্ধু-বাসা থেকে। কারও সঙ্গে আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস মিলছে না, দেখা গেল ক্রিকেটনৈতিক মত মিলে যায়, সিনেমানৈতিক মত। সে খুব ভালো সমাজতত্ত্ব প্রাণী মানুষ হয়ত নয়, কিন্তু আমার চেয়ে প্রমাণ হবে অনেক বেটার ভাই, কি প্রতিবেশী  কি বোনঝি। তাহলে কিছুটা টোল খেয়ে গেলেও তাকে সম্মান বা শ্রদ্ধার জায়গাটা হারাচ্ছি না।

সংসারে কেউ মেয়ে হিসেবে অপূর্ব লক্ষ্মী, বোন হিসেবে হিংসুটে; দুরন্ত প্রেমিক কিন্তু স্বামী তৃতীয় শ্রেণীর। কোনও মানুষ সর্বাঙ্গ অনঙ্গ হতে পারে না। উত্তম কি হাসির রোলে ভানুকে হারাতে পেরেছেন? আমি তো ভাবি, কবি-লোক বর হলে নচ্ছার, কিন্তু বাবা হিসেবে যে কোনও তুলনা তাদের কাছে হীন।

এই যে জ্বলন্ত গরম, বৃষ্টিহীন গুলিবিনিময়, নিশ্ছিদ্র খুনের ওপর খুন, আমাদের দরকার আরও বেশি বেশি অরুষ্ট মানুষ। শব্দের উত্তেজনা কম যাদের ঠোঁটে। হজরত যা চেয়েছিলেন আলির কাছে বা তথাগত যেমন ছিলেন অঙ্গুলিমালের ওঠানো খাঁড়ার সামনে উদাসীন।

পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণায়ন তো আমাদের মাথার মধ্যেই ঘটে বসে আছে, না কি?

তাহলে আমার লেখায় আর বিরোধীকে জল-অচল করছি না। হঠাৎ দেখা হলে রাস্তায় এক কাপ চা খাচ্ছি পাশাপাশি, বাচ্চাটা কেমন আছে খোঁজ নিলাম। দ্যাখো গে যাও, মনে মনে সেও তাই চাইছে। না হলে, আমার মুখোশ-খোলা মুখ বারবার চোখের সামনে নেচে তার মুখোশটাও টুক করে আলগা করে দেবে। সে পালটাবেই না বলছো! সাড়া শোনাবে না? অবিশ্বাস করলাম। আচ্ছা, না হোক, আমি তো ডেকে দিয়েছি। তাতেই আমার চিরস্থায়ি কিফায়ত। এবং ধরিত্রীরও!